আজ ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের ৫৫তম বর্ষ। এটি বাঙালি জাতির জন্য সবচেয়ে গৌরবময় দিন, যে দিনটি চিরস্মরণীয় পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর জন্য। ১৯৭১ সালের এই দিনে শুরু হয়েছিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্য চূড়ান্ত লড়াই।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে নৃশংস সামরিক অভিযান চালিয়ে নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হত্যাযজ্ঞ চালায়। এর পরদিন, ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয় মুক্তির যুদ্ধ, যা ৯ মাসব্যাপী চলে। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও অগণিত মা-বোনের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় আমাদের স্বাধীনতা।
স্বাধীনতার স্বপ্ন ও বাস্তবতা
স্বাধীনতার লক্ষ্য ছিল, ‘আমাদের ভাগ্য আমরাই গড়বো’, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত আমরাই নেবো’। এই আদর্শকে সামনে রেখেই বীর মুক্তিযোদ্ধারা অকাতরে জীবন উৎসর্গ করেছেন। কিন্তু যাঁরা আত্মত্যাগ করেছেন, তাঁদের অনেকেই স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারেননি। তবু তাঁদের অবদান জাতি চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।
তবে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে, তা নিয়ে রয়েছে বিস্তর বিতর্ক। স্বাধীনতার অর্জন ও ঘাটতি নিয়ে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন মতামত।
সমাজে এখনো শোষণ ও বৈষম্য বিদ্যমান
স্বাধীনতার ৫৫ বছর পেরিয়ে গেলেও দেশের খেটে খাওয়া মানুষের জীবনযাত্রায় কাঙ্ক্ষিত উন্নতি আসেনি। শ্রমিক ও মজুর শ্রেণির মানুষ এখনো শোষণের শিকার। সাধারণ জনগণ তাঁদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য এখনো লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক দিক থেকেও প্রত্যাশিত সাফল্য পুরোপুরি ধরা দেয়নি।
স্বৈরশাসকের পতনের পর নতুন চেতনা
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর এবারের স্বাধীনতা দিবস এক নতুন মাত্রা পেয়েছে। রাষ্ট্রীয় কাঠামোর অনেক কিছু বদলে গেছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বেড়েছে, অধিকার আদায়ের সংগ্রামে জনগণ আরও সক্রিয় হয়েছে।
রাজবাড়ীর কলেজ শিক্ষক সাহেদুর রহমান ফেসবুকে এক পোস্টে লেখেন, ‘বাংলাদেশ ৫৫ বছরে পা রাখছে, অথচ প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতার স্বাদ দেশের মানুষ কখনো পায়নি। আর কত রক্ত ঝরলে সত্যিকারের স্বাধীনতা মিলবে?’
তবে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিয়াম রহমান ভিন্ন মত প্রকাশ করেন। তিনি মনে করেন, স্বাধীনতা দিবসের এবারের উদযাপন আলাদা, কারণ জনগণ গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়েছে। তাঁর ভাষায়, ‘৫ আগস্টের পর জনগণ নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য সরব হয়েছে। বৈষম্যের শিকার মানুষগুলো তাঁদের দাবি নিয়ে এগিয়ে আসছেন, এবং সাফল্যও পাচ্ছেন।’
ঐক্যের মাধ্যমেই পূর্ণ স্বাধীনতা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ মনে করেন, স্বাধীনতার অনুভূতি ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন হতে পারে। তবে রাষ্ট্রের দায়িত্ব সবাইকে সেই অনুভূতি দেওয়া।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফায়েজ মনে করেন, বিভেদ ও বিভাজন স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণে বড় বাধা। রাজনৈতিক দল, সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে বিভাজনের সংস্কৃতি বজায় থাকায় নাগরিকদের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
তবে তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পর জনগণের মধ্যে যে ঐক্য তৈরি হয়েছে, তা ধরে রাখলে স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ পাওয়া সম্ভব হবে। মুক্তিযোদ্ধারা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা বাস্তবায়নের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাব আমরা।’