ঢাকা: আসন্ন পবিত্র রমজান মাসকে কেন্দ্র করে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা এবং অন্যান্য প্রধান শহরগুলোতে অপরাধ দমনে বাড়ানো হচ্ছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। চলমান অভিযানের অংশ হিসেবে কিছু বিতর্কিত অপারেশনের নাম ও কৌশল পরিবর্তন করা হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে বহুল আলোচিত ‘ডেভিল হান্ট’ নামে পরিচিত বিশেষ অভিযান।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা
রমজান মাসে মানুষের চলাচল, বাজারে ভিড় এবং নগদ লেনদেন বেড়ে যাওয়ার ফলে ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার মতো অপরাধ বাড়ার প্রবণতা দেখা যায়। এ অবস্থায়, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অপরাধ দমন এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি থানাকে বিশেষ নজরদারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মার্কেট, বাসস্ট্যান্ড, ট্রেন স্টেশন ও বড় বড় মসজিদগুলোর আশপাশে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিশেষ করে তারাবি নামাজ এবং সেহরি ও ইফতারের সময় সড়কে টহল জোরদার করা হবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার জানিয়েছেন, “রমজান মাসে মানুষ যেন নির্বিঘ্নে ইবাদত ও দৈনন্দিন কাজ করতে পারে, সে জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে। কোনো ধরনের চাঁদাবাজি, ছিনতাই বা দুষ্কৃতকারীদের তৎপরতা বরদাস্ত করা হবে না।”
বিতর্কিত ‘ডেভিল হান্ট’ অপারেশন বন্ধ
বিভিন্ন অপরাধ নিয়ন্ত্রণে চালু হওয়া ‘ডেভিল হান্ট’ নামে বিশেষ অভিযান সম্প্রতি বেশ বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে অভিযানের ধরন নিয়ে সমালোচনা করা হয়, বিশেষ করে বিনা তদন্তে গ্রেপ্তার এবং অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ ওঠে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, “আমরা অপরাধ দমনে কঠোর থাকবো, তবে আইনগতভাবে ন্যায্যতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। ‘ডেভিল হান্ট’ নাম পরিবর্তন করা হচ্ছে, একই সঙ্গে এর কার্যক্রম আরও সুস্পষ্ট ও স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিচালনা করা হবে।”
বাজার মনিটরিং ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ
রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ানোর প্রবণতা রোধে বাজার মনিটরিং জোরদার করা হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাজার পর্যবেক্ষণে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বিশেষ দল কাজ করবে। কাঁচাবাজার, সুপার শপ ও পাইকারি বাজারগুলোতে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হবে।
মাদক ও চোরাচালান প্রতিরোধে অভিযান
রমজানে মাদক ব্যবসায়ীদের তৎপরতা বেড়ে যেতে পারে, এ আশঙ্কায় বিশেষ মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালিত হবে। সীমান্ত এলাকাগুলোতে বিজিবি ও কাস্টমস বিভাগের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।
পুলিশ জানায়, বিশেষ করে ইয়াবা, ফেনসিডিল ও অন্যান্য নিষিদ্ধ মাদকের চোরাচালান রোধে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
সাইবার অপরাধ ও প্রতারণা রোধে ব্যবস্থা
রমজানে অনলাইন প্রতারণার ঘটনা বাড়তে পারে, বিশেষ করে ভুয়া অফার ও অনলাইন লেনদেন সংক্রান্ত জালিয়াতি। এসব প্রতারণা রোধে সাইবার ক্রাইম ইউনিট বিশেষ মনিটরিং চালাবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে অনলাইন কেনাকাটার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
রমজান মাসে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে। বিতর্কিত অভিযানগুলোর পদ্ধতি পরিবর্তন করে আরও স্বচ্ছতার মাধ্যমে অপরাধ দমন করা হবে। আশা করা হচ্ছে, এসব উদ্যোগের ফলে রমজান মাসে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকবে।