সোমবার, ২৪শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ

একটি প্রতিষ্ঠান একটির বেশি গণমাধ্যমের মালিক হতে পারবে না

একটি প্রতিষ্ঠান একটির বেশি গণমাধ্যমের মালিক হতে পারবে না

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দিয়েছে। শনিবার (২২ মার্চ) যমুনায় কমিশনের সদস্যরা এই প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন।

প্রতিবেদন জমার পর এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন কমিশনের প্রধান ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কামাল আহমেদ।

তিনি জানান, কমিশন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো একটি প্রতিষ্ঠান কেবল একটি গণমাধ্যমের মালিক হতে পারবে। অর্থাৎ, একাধিক সংবাদমাধ্যমের মালিকানা কোনো একক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি রাখতে পারবেন না। এ ছাড়া, বাসসকে জাতীয় সম্প্রচার সংস্থার সঙ্গে একীভূত করার প্রস্তাবও করা হয়েছে।

কামাল আহমেদ বলেন, ‘ওয়ান হাউস, ওয়ান মিডিয়া’ নীতির ভিত্তিতে গণমাধ্যম পরিচালিত হবে। এছাড়া, বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতারকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়া এবং এই দুই প্রতিষ্ঠানকে একীভূত করে জাতীয় সম্প্রচার সংস্থা গঠন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে সাংবাদিকদের জন্য কিছু নীতিগত পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

  • সাংবাদিকদের প্রাথমিক বেতন বিসিএস ক্যাডারদের ৯ম গ্রেডের সমান করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

  • ঢাকায় কর্মরত সাংবাদিকদের জন্য ‘ঢাকা ভাতা’ চালুর সুপারিশ করা হয়েছে।

  • সাংবাদিকতা করতে হলে ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রি বাধ্যতামূলক করা হবে।

  • প্রথম বছর শিক্ষানবিশ সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতে হবে, এরপর স্থায়ী পদে উন্নীত করা হবে।

  • সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ‘সাংবাদিকতা সুরক্ষা আইন’ তৈরির সুপারিশ করা হয়েছে, যার খসড়াও প্রস্তুত করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে কামাল আহমেদ বলেন, ‘‘গণমাধ্যমে বিপুল পরিমাণ কালো টাকা প্রবেশ করেছে। অধিকাংশ গণমাধ্যম রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে অনুমোদন পেয়েছে, অথচ জনস্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি।’’

তিনি আরও জানান, সরকারি হিসাবে ৬০০টি পত্রিকা সরকারি বিজ্ঞাপন পাওয়ার যোগ্য বলে দেখানো হলেও বাস্তবে মাত্র ৫২টি পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত ও বিক্রিত হয়। বাকিগুলো সরকারি বিজ্ঞাপন হাতিয়ে নেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ব্যক্তিরা

সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের অন্যান্য সদস্য উপস্থিত ছিলেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন—

  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতিআরা নাসরীন

  • দ্য ফিন্যানসিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক ও সম্পাদক পরিষদের প্রতিনিধি শামসুল হক জাহিদ

  • অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন ওনার্স (অ্যাটকো) প্রতিনিধি অঞ্জন চৌধুরী

  • নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) সচিব আখতার হোসেন খান

  • জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ

  • যমুনা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম আহমেদ

  • বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক উপ মহাপরিচালক কামরুন নেসা হাসান

  • মিডিয়া সাপোর্ট নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক সাংবাদিক জিমি আমির

  • ডেইলি স্টারের বগুড়া জেলা প্রতিনিধি মোস্তফা সবুজ

  • বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের ডেপুটি এডিটর টিটু দত্ত গুপ্ত

  • শিক্ষার্থী প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মামুন

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের এই সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে গণমাধ্যম খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ