২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাতে বর্বর অত্যাচারের শিকার হয়ে দেশটির রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা। বর্তমানে তারা কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। তবে তাদের মধ্যে একটি অংশ এখন দেশে ফিরে যেতে এবং তাদের মাতৃভূমিতে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট এ বিষয়ে এক বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
মিয়ানমারে ২০২১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রোহিঙ্গাদের যুদ্ধের প্রস্তুতি ত্বরান্বিত হয়েছে। কক্সবাজারের ক্যাম্পে অবস্থানরত মোহাম্মদ আয়াস (ছদ্মনাম) নামে এক রোহিঙ্গা যুবক জানান, তারা মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। আয়াস বলেন, “আমরা প্রস্তুত। আমার জনগণের জন্য মরতে প্রস্তুত।” ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তার পরিবারকে উচ্ছেদ করার পর থেকেই তিনি এই যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
এছাড়াও, একাধিক রোহিঙ্গা যোদ্ধা এবং কমান্ডারের দাবি, তারা মিয়ানমারের গভীর জঙ্গলে কয়েক মাস ধরে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তাদের প্রশিক্ষণ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য, তবে একই সঙ্গে তারা আরাকান আর্মি নামে একটি বৌদ্ধ সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেও যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
রোহিঙ্গা গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে এই সশস্ত্র আন্দোলন আরও জোরাল হচ্ছে। কক্সবাজারের ক্যাম্পে থাকা হাজার হাজার যুবক স্ব-ইচ্ছায় এই গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন। ২০১৭ সালের গণহত্যার শিকার হওয়ার পর থেকেই তারা নিজেদের মাতৃভূমি পুনরুদ্ধার করতে প্রস্তুত। তারা এমন এক পরিস্থিতিতে শরণার্থী ক্যাম্পে বসবাস করছেন, যেখানে তাদের চলাচলে স্বাধীনতা নেই এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা থেকেও তারা বঞ্চিত।
অপরদিকে, মিয়ানমারে সেনাবাহিনী এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে রোহিঙ্গাদের মধ্যে আরও বড় ধরনের লড়াইয়ের আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে জাতিগত নিধন এবং যুদ্ধের কারণে রোহিঙ্গারা নিজেদের বিরুদ্ধে অবিচার দেখে, ফলে তারা নিজেদের মুক্তি ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় সশস্ত্র সংগ্রামের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
তবে, এই সংগ্রাম শুধু মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং রোহিঙ্গাদের জন্য প্রতিকূল পরিস্থিতি আরও বাড়বে, যদি আন্তর্জাতিক সহায়তা ও সহমর্মিতা না আসে।