সোমবার, ১৪ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি:

সখীপুরে সংরক্ষিত বনে আগুন: হুমকির মুখে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

সখীপুরে

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার সংরক্ষিত শাল-গজারি বন ও বিভিন্ন প্রজাতির গাছের বাগান স্থানীয়দের দেওয়া আগুনে পুড়ে যাচ্ছে। এতে বিপর্যস্ত হচ্ছে বনাঞ্চলের পরিবেশগত ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য। পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়েছে সরকারের টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্প। গত এক মাস ধরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বারবার এমন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। বন বিভাগ এলাকায় মাইকিং করলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না।

জানা গেছে, সুফল প্রকল্পের আওতায় সখীপুরের ৭২০ হেক্টর বনভূমিতে ৪২ প্রজাতির ফলদ ও ঔষধি গাছের মোট ১০ লাখ ৮০ হাজার চারা রোপণ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে আমলকী, লটকন, হরীতকী, নিম, বহেড়া, গর্জন, গামার, কাঠবাদাম, শিমুল, অর্জুনসহ আরও বহু প্রজাতির গাছ।

কিন্তু বনে লাগানো এসব গাছে লাগাতার আগুন দেওয়ায় প্রকল্পের অনেক চারা পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে একদিকে বনভূমি ও পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী যেমন বানর, শিয়াল, কাঠবিড়ালি, বেজি, গুইসাপ, পেঁচা, শালিক, চিল, এমনকি বিষধর সাপও প্রাণ হারাচ্ছে বা বাসস্থান হারিয়ে লোকালয়ে চলে আসছে।

সম্প্রতি সখীপুরের বিভিন্ন সংরক্ষিত বনাঞ্চল যেমন এমএম চালা, কচুয়া, কাকড়াজান, বড়চওনা, মরিচা, দেওবাড়ী, কালমেঘা, তক্তারচালা, বহেড়াতৈল, নলুয়া এলাকায় আগুনে পুড়তে দেখা গেছে।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ২৮ হাজার ৫৯৪ দশমিক ৫২ একর সংরক্ষিত বন রয়েছে। এর মধ্যে শাল-গজারির বনের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ২০০ একর। সুফল প্রকল্পে প্রায় ১ হাজার ৭৮০ একর বনভূমিতে রোপণ করা হয়েছে বিভিন্ন গাছের চারা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, শুষ্ক মৌসুম এলে স্থানীয়রা বিভিন্ন কারণে আগুন দেয়। কেউ কেউ রাতের আঁধারে গাছ কেটে ফেলে রেখে যায়, পরে দিনের বেলায় আগুন দিয়ে প্রমাণ মুছে ফেলে। আবার কেউ কেউ মনে করে, শুকনো পাতার ছাই ধানের জমিতে সার হিসেবে কাজে আসে, তাই আগুন দেয়। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে জমির ক্ষতি হয়।

বাসারচালা গ্রামের লুতফর রহমান বলেন, আগুন দিয়ে জমি সার হওয়ার ধারণা ভুল। বরং এতে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাই এটি বন্ধ করা জরুরি। সাড়াসিয়া গ্রামের শাহ-জালাল বলেন, পাতাঝরার সময় গজারিগাছের শুকনো পাতা পরিষ্কার করতে এলাকার মানুষ আগুন দেয়। এই প্রক্রিয়াটি প্রতি বছরই চলে আসছে।

হাতিয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রহিজ উদ্দিন বলেন, বন ধ্বংসের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এতে উপকারী কীটপতঙ্গও মারা যাচ্ছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তিনি সবাইকে পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

বন বিভাগের বহেড়াতৈল রেঞ্জ কর্মকর্তা এমরান আলী বলেন, স্থানীয়দের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও কিছু লোক রাতে চুপিসারে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যায়। এজন্য বন পাহারা জোরদার করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বনায়ন কমিটির সভাপতি মো. আবদুল্লাহ আল রনী জানান, বন বিভাগকে সঙ্গে নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে সচেতনতামূলক কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে যেন কেউ বনে আর আগুন না দিতে পারে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ