সোমবার, ১৪ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপে অর্থনীতিতে প্রভাব পড়লেও তা সামাল দেওয়া সম্ভব – অর্থ উপদেষ্টা

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন করে আরোপিত শুল্কের কারণে অর্থনীতিতে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে, তবে তা মোকাবেলা কঠিন হবে না বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, কীভাবে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়, তা পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

রবিবার (৬ এপ্রিল) সচিবালয়ে নিজের অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি আরও জানান, এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে সরকার, এবং এ থেকে ইতিবাচক ফল আসবে বলেই তিনি আশাবাদী।

তিনি বলেন, রমজান ও ঈদে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে এবং এতে মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি উন্নতির দিকে যাচ্ছে, এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়ছে।

উল্লেখ্য, এত দিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের গড় শুল্কহার ছিল ১৫ শতাংশ। তবে ২ এপ্রিল ট্রাম্প প্রশাসন আরও ৩৭ শতাংশ নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। এর ফলে, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে, বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানিতে বড় ধাক্কা লাগার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ১৮ শতাংশের গন্তব্য।

এই শুল্কারোপ শুধু বাংলাদেশের ওপরই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপরও নতুন শুল্ক বসিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এতে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য এবং চীনসহ বিভিন্ন দেশের নেতারা ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। চীন পাল্টা শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ট্রাম্প একটি নতুন বাণিজ্যযুদ্ধের সূচনা করেছেন।

উপস্থিত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ভারসাম্য বাংলাদেশের অনুকূলে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি অনেক বেশি হলেও তা মূলত তৈরি পোশাক খাতের ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে আসা পণ্যের মধ্যে প্রধানত লোহা, ইস্পাত, খনিজ জ্বালানি, তুলা, তেলবীজ ও নিউক্লিয়ার যন্ত্রপাতি রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১০.১৩ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল ৭.৫৯ বিলিয়ন ডলার এবং আমদানি ২.৫৩ বিলিয়ন ডলার।

একই বছরে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৬০১.৪ মিলিয়ন ডলারের লোহা ও ইস্পাত, ৫৯৫.২ মিলিয়ন ডলারের খনিজ জ্বালানি, ৩৬১ মিলিয়ন ডলারের তুলা, ৩৪১ মিলিয়ন ডলারের তেলবীজ এবং ১১১ মিলিয়ন ডলারের নিউক্লিয়ার যন্ত্রপাতি আমদানি করেছে।

বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের বড় অংশ তৈরি পোশাক থেকে আসে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ছিল ৭.৫৯ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে ৭.৪৩ বিলিয়ন ডলার এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। বাকি অংশ এসেছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, চামড়ার জুতা, ওষুধ এবং কৃষিপণ্য থেকে।

গত কয়েক অর্থবছরের বাণিজ্য পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে বেশি ছিল এবং আমদানির তুলনায় এই পরিমাণে বড় ব্যবধান বজায় রয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ